“রোগমুক্তি নয়, কর্মক্ষমতায় ফেরা—স্বাধীন ফিজিওথেরাপিস্ট ছাড়া সম্ভব নয়”

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ক্রমাগত পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এক সময় সংক্রামক রোগ ছিল প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকি, বর্তমানে তার জায়গা নিয়েছে -সংক্রামক রোগ, দুর্ঘটনাজনিত আঘাত, বার্ধক্যজনিত জটিলতা এবং কর্মস্থলসম্পর্কিত শারীরিক সমস্যা। বাস্তবতায় কেবল ওষুধ, অস্ত্রোপচার বা হাসপাতালের শয্যা বাড়ালেই যথেষ্ট নয়; রোগীর পূর্ণ পুনর্বাসন এখন স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম অপরিহার্য অঙ্গ আর পুনর্বাসনের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছেন ফিজিওথেরাপিস্টরা




কেন
স্বাধীনতা জরুরি?
বাংলাদেশে এখনো অনেকেই ফিজিওথেরাপিস্টদের গৌণ বাসহায়কসেবা হিসেবে দেখেন। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং World Physiotherapy (পূর্বে WCPT) স্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যে ফিজিওথেরাপি একটি স্বতন্ত্র স্বাস্থ্য পেশা (Autonomous Profession)

যুক্তরাজ্যে ফিজিওথেরাপিস্টরা First Contact Practitioner (FCP) হিসেবে কাজ করেন, যেখানে রোগী সরাসরি তাদের কাছে যায় এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়াই তারা মূল্যায়ন, চিকিৎসা পরিকল্পনা থেরাপি দিতে পারেন।
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা নিউজিল্যান্ডে ফিজিওথেরাপিস্টরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করেন এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় প্রথম লাইন প্রফেশনাল হিসেবে নিয়োজিত থাকেন।
ভারতে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে ফিজিওথেরাপিকে একটি স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং সরকারি হাসপাতালে পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র
বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপির শিক্ষা চালু হলেও এখনো:
সরকারি কাঠামোতে গ্র্যাজুয়েট স্তরের ফিজিওথেরাপিস্টের পদ নেই
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ফিজিওথেরাপি) প্রফেশনাল ফিজিওথেরাপিস্টদের ভূমিকা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে।
প্রেসক্রিপশন, মূল্যায়ন চিকিৎসা পরিকল্পনায় তাদের স্বাধীনতা স্বীকৃত নয়।
ফলে জনগণ হয় ব্যয়বহুল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নেয়, নয়তো সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রমাণভিত্তিক প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, তাদের ৭৫% দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন প্রয়োজন।
প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা (৬০+) এখন প্রায় %, যাদের বড় অংশ আর্থ্রাইটিস, কোমর ব্যথা চলাফেরার সীমাবদ্ধতায় ভোগেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বা অস্ত্রোপচারের পর ফিজিওথেরাপি না পাওয়ায় অসংখ্য রোগী কখনোই পূর্ণ সুস্থতা ফিরে পান না।
এই বাস্তবতায় ফিজিওথেরাপিস্টদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দিলে জাতীয় স্বাস্থ্যব্যয় বাড়বে, উৎপাদনশীলতা কমবে এবং অক্ষম জনগোষ্ঠী বাড়বে
কী করা জরুরি?
স্বতন্ত্র ফিজিওথেরাপি কাউন্সিল গঠন করতে হবে, যারা নিবন্ধন, মান নিয়ন্ত্রণ পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে।
সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফিজিওথেরাপিস্টের পদ সৃষ্টি করতে হবে।
প্রেসক্রিপশন চিকিৎসা পরিকল্পনায় ফিজিওথেরাপিস্টদের স্বাধীনতা দিতে হবে, যেমনটা যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া কানাডায় চালু আছে।
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কারিকুলাম, উচ্চশিক্ষা গবেষণার সুযোগ বাড়াতে হবে।
টেলি-রিহ্যাবিলিটেশন চালু করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকেও সাশ্রয়ী সেবা দিতে হবে।
উপসংহার
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার আসল উদ্দেশ্য শুধু রোগ সারানো নয়, বরং মানুষকে পূর্ণ কর্মক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা কাজের নেতৃত্বে থাকতে হবে ফিজিওথেরাপিস্টদেরতারা কারো অধীন নন, বরং একটি স্বাধীন চিকিৎসা পেশা স্বাস্থ্যনীতি, বাজেট প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় ফিজিওথেরাপিস্টদের স্বতন্ত্র অবস্থান নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ একটি টেকসই, আধুনিক জনবান্ধব স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে।
 

6 Comments